শূন্য ও বিভাজন
আমাদের অতি পরিচিত একটি সংখ্যা শূন্য। প্রতিদিনের জীবন সুন্দর করে তোলার ক্ষেত্রে অন্য কোনো সংখ্যা এমন গুরুত্ব পাবে কিনা ঠিক বলা সম্ভব নয়। শূন্যের এত গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও শূন্যের ব্যাপারে এখনো অনেক কিছুই রয়ে গিয়েছে অজানা। আজকের আলোচনায় স্থান পেয়েছে এমনই একটি প্রশ্ন – শূন্যকে শূন্য দিয়ে ভাগ করলে কী হবে? তবে আলোচনা শুরু করার পূর্বে আপনি নিজেই একবার ভেবে দেখুন না হয় – কী হতে পারে এর জবাব। উত্তরটি কি আপনি সংখ্যা রেখার মাধ্যমে চিহ্নিত করতে পারবেন?
শূন্য প্রথম ব্যবহার করেছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের আর্যভট্ট, খ্রিষ্টপূর্ব ৪৯৮ সালে। কিন্তু শূন্য বলতে আমরা আসলে কী বুঝি? প্রশ্নটির উত্তর হয়তো আপনার কাছে খুবই সহজ মনে হতে পারে। কোনো কিছু না থাকলেই সেটা শূন্য। যেমনটি দেখা যাচ্ছে নিচের দুটি ছবিতে। একটি ছবিতে দুটি কুকুর ঘাসের উপর শুয়ে আছে। অন্যটিতে শূন্যটি কুকুর রয়েছে। অর্থাৎ সেখানে শুধুমাত্র ঘাস রয়েছে।এখন আসা যাক ভাগ বলতে কী বুঝায় তা নিয়ে। যেমন ধরুন আপনার কাছে ১২ টুকরা চকলেট আছে। আপনি তা ৩ জনের মধ্যে ভাগ করে দিবেন। তাহলে প্রতিজন ভাগে ১২/৩ = ৪ টুকরা করে পাবে।
খুব সুন্দরভাবে ভাগটা হয়ে গেল, তাই না? এখন তাহলে চিন্তা করুন, এই ১২ টুকরা আপনি যদি ০ (শূন্য) জনের মাঝে ভাগ করতে চাইতেন তাহলে কী হতো? প্রশ্নটা কেমন জানি বেখাপ্পা হয়ে গেল মনে হয়। শূন্যজনের মাঝে আদৌ কোনো কিছু ভাগ করা সম্ভব না। কেউ না থাকলে সেক্ষেত্রে বিতরণের প্রশ্ন আসবে কী করে!
ব্যাপারটা অন্য একভাবে চিন্তা করা যায়। ৩ এবং ৪ গুণ করলে ১২ পাওয়া সম্ভব। শূন্যকে যে সংখ্যা দিয়েই গুণ করা হোক না কেন তার উত্তর সবসময় শূন্যই আসবে। কেননা, ০ × (যেকোনো সংখ্যা) = ০। তাহলে কি আমরা কোনোরকম সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারব না? কোনোভাবেই কি একে সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব নয়?
আমাদের মূল প্রশ্নে যাওয়ার পূর্বে আরেকটি তুলনামূলক সোজা প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে এখন একটু চিন্তা করি। আপাতত ০/০ পরিবর্তে ১/০ এর মান নির্ণয় করি। এই প্রশ্নের জবাবে তাহলে একটি ফাংশনের কথা চিন্তা করা যাক। ফাংশনটি হলো (x) = 1/x,, এই ফাংশনটিতে x এর মান বসানো হলে তা নিচের ছকের ন্যায় মান প্রদর্শন করে।
x | ৪ | ৩ | ২ | ১/১০ | ১/১০০ | ১/১০০০ | ১/১০০০০ | ১/১০০০০০০০ |
f(x) | ১/৪ | ১/৩ | ১/২ | ১০ | ১০০ | ১০০০ | ১০০০০ | ১০০০০০০০ |
এখানে দেখা যাচ্ছে x এর মান যতই শূন্যের কাছে আসছে f(x) এর মান ততোই সংখ্যা রেখার ডানদিকে সরে যাচ্ছে। অর্থাৎ x এর মান শূন্যের দিকে যতই অগ্রসর হচ্ছে ফাংশনটি ততোই অসীমের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। অতএব এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে ১/০ এর মান এক পর্যায়ে অসীমের সমান হবে। অতএব বলা যায় এই ভগ্নাংশের সীমান্তিক মান অসীম।
কিন্তু আমরা ফাংশনটির মানের জন্য শুধুমাত্র ধনাত্মক মান বিবেচনা করেছি। ঋণাত্মক মানও তো ব্যবহার করা যেত – এমন প্রশ্ন যে কারও মনে আসতেই পারে। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নিচে পূর্বের ন্যায় আরেকটি ছক করা হলো।
x | – ৪ | – ৩ | – ২ | – ১/১০ | – ১/১০০ | – ১/১০০০ | – ১/১০০০০ |
f(x) | – ১/৪ | – ১/৩ | – ১/২ | – ১০ | – ১০০ | – ১০০০ | – ১০০০০ |
এখানে ঠিক আগের মতই কিছু একটা হয়েছে। যতই শূন্যের কাছে আসা হচ্ছে ফাংশনটির মান ততোই অসীমপানে ধাবিত হচ্ছে। তবে এখানে ব্যতিক্রম যা হয়েছে তা হচ্ছে এবার ফলাফল ঋণাত্মক অসীম আসছে। অতএব এক্ষেত্রে ফাংশনটির সীমান্তিক মান ঋণাত্মক অসীম।
কিন্তু কিছুক্ষণ আগেই তো আমরা সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম যে ১/০ এর মান ধনাত্মক অসীমের সমান আর এখন দেখা যাচ্ছে এর মান ঋণাত্মক অসীম। তাহলে আমরা এই সমস্যার কি সমাধান বিবেচনা করবো? ১/০ অসংজ্ঞায়িত অর্থাৎ এটি কোনো মান দ্বারা ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয় তবে এর সীমান্তিক মান ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক অসীম।
তাহলে ০/০ এর ক্ষেত্রে কী হবে? কোনো কিছু না থাকলে তাকে যদি আবার শূন্য দিয়ে ভাগ করা হয় তাহলে কী হতে পারে? অনেকের মনে বিভিন্ন সমাধান আসতে পারে এক্ষেত্রে। প্রথমত হতে পারে ০ কে যেকোনো সংখ্যা দিয়ে গুণ করলে শূন্য হয়, তাহলে এর মান শূন্য হবে। দ্বিতীয়ত হতে পারে, যেকোনো সংখ্যাকে সেই একই সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে ১ হয়। সে বিবেচনায় এর মান আসা উচিত ১। আবার যেহেতু ১/০ মান নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি, সে হিসেবে ০/০ এর কোনো মান থাকা উচিত না। অর্থাৎ ০/০ অসংজ্ঞায়িত হবে। ব্যাপারটা ঠিক এমনটাই। গণিতবিদরা অনেক চিন্তা ভাবনার পরও আজ পর্যন্ত ০/০ এর মানের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন নি। যার কারণে ০/০ আজও হয়ে রয়েছে অসংজ্ঞায়িত এবং অনির্ণেয়।
লেখার শুরুতে আপনাদের কাছে একটি প্রশ্ন রেখেছিলাম। এখন আলোচনা শেষে। চিহ্নিত করতে পারবেন কি উত্তরটি?
শূন্য ও বিভাজন
Reviewed by Brandon
on
09:19
Rating:
No comments: