আমরা এখনো এলিয়েনদের দেখা পাইনি কেনো?
অনুমান করা হয় যে, আমাদের এই মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে প্রায় ১০০ বিলিওন গ্রহ আছে, এবং মিল্কিওয়ে এর মতো পুরো মহাবিশ্বে প্রায় শত লক্ষ গ্যালাক্সি রয়েছে। পৃথিবীর মাধ্যমেই এই মহাবিশ্বে প্রথম জীবন সঞ্চারণ ঘটে। ফলে এমনটা অনুমান করা হয় যে পৃথিবীর মতো আরো অনেক গ্রহ আছে যেখানে প্রাণ সঞ্চার সম্ভব। এখন প্রশ্ন হলো, যদি বাকি গ্রহগুলোতে প্রাণ সঞ্চার সম্ভব হয় এবং সেখানে যদি কেউ বসবাস করেও থাকে, তাহলে তারা কোথায়?
এ সম্পর্কে পরিষ্কার কোন মতবাদ এবং যুক্তি না থাকার ফলে প্রশ্নের জবাব আজও পর্যন্ত জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ঠিকমতো দিতে পারেননি। ইটালিয়ান জ্যোতির্বিদ Enrico Fermi এই বিষয়টিকে ফার্মি প্যারাডক্স ( Fermi Paradox ) বলে আখ্যায়িত করেন এবং বলেন, যদি প্রাণ সঞ্চারণ এতোই প্রচুর পরিমানে হয়ে থাকে, তবে আমরা আজ পর্যন্ত বহির্বিশ্বে কারো খোঁজ পাইনি কেনো?
এসব বিষয়ের কোন সোজা এবং পরিষ্কার ব্যাখ্যা না থাকলেও কিছু সম্ভাব্য ব্যাখ্যা রয়েছে, তার মধ্যে কিছু নিচে আলোচনা করা হলোঃ
এই মহাবিশ্ব সুদূরপ্রসারী– মহাবিশ্বে আমাদের ছায়াপথের বাইরে সব ছায়াপথের দূরত্ব মূলত আলোকবর্ষ দিয়ে পরিমাপ করা হয়। অর্থাৎ, এতোই দূরে একেকটা গ্যালাক্সি। এখন পৃথিবীর মতো বসবাসযোগ্য যেসব গ্রহ থেকে থাকবে, তাও হবে হাজার হাজার আলোকবর্ষ দূরে। এখন এতোটুকু দূরে যোগাযোগ করার একমাত্র উপায় হলো ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন, যা অনেকটা অসম্ভব। ফলে এতো দূরের গ্রহের সন্ধান পাওয়া / কিংবা গ্রহটির কাছে যাওয়া পুরোপুরি অসম্ভব( যতদিন আলোর গতি অর্জন করার মতো প্রযুক্তি আবিষ্কার না হয় )। মোট কথা , প্রাণ সঞ্চার সম্ভব / বসবাসযোগ্য পৃথিবীগুলো যোগাযোগ করার মতো দুরত্বে নেই বলে বহির্বিশ্বে প্রাণ সঞ্চারের ব্যাপারে আমরা এখনো অজ্ঞ।
আমরা মহাবিশ্বকে ঠিকমতো দেখিনিঃ আমরা এখনো বহির্বিশ্ব সম্পর্কে পুরোপুরি জানিনা বা এখনো ঠিকমতো বহির্বিশ্বকে পর্যবেক্ষন করিনি। আজ পর্যন্ত বহির্বিশ্ব সম্পর্কে যতো অনুসন্ধান হয়েছে, তা মূলত টেলিস্কোপ নির্ভর এবং টেলিস্কোপ নির্ভর প্রযুক্তিতেই সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। SETI Institute মূলত এসব extraterrestrial intelligence (SETI) সম্পর্কিত অধিকাংশ অনুসন্ধান চালিয়ে আসছে, যদিও এখনো তেমন কোন উল্লেখজনক ফলাফল তারা পায়নি। যার ফলে এলিয়েনদের সন্ধান করাও সম্ভব হয়ে উঠেনি।
এ বছরের প্রথম দিকে রাশিয়ান বিলিওনিয়ার Yuri Milner Breakthrough Listen নামের প্রোজেক্টে প্রায় ১০০ মিলিওন ডলার অনুদান করেন। ফলে বহির্বিশ্বে প্রাণের সন্ধানে এটিই হবে সবচেয়ে ব্যয়বহুল এবং বিস্তৃত গবেষণা। এই প্রোজেক্টে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দুইটি রেডিও টেলিস্কোপ ব্যবহৃত হবে, যেগুলোর একটি হলো ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার Green Bank Observatory এবং আরেকটি অস্ট্রেলিয়ার the Parkes Observatory। এগুলোর সাহায্যে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের ১০০ মিলিওন নক্ষত্র এবং পাশাপাশি সবচেয়ে কাছের ১০০ ছায়াপথের উপর পর্যবেক্ষন করা হবে। এসব থেকে প্রাপ্ত সকল সিগন্যাল পর্যবেক্ষন করা হবে এবং সেগুলোতে প্রাণ সংক্রান্ত কোন গোপন মেসেজ বা সূত্র লুকিয়ে আছে কিনা তাও অনুসন্ধান করা হবে । সবশেষে বলা যায়, গত কয়েক বছরে যদি বহির্বিশ্বে প্রাণের সন্ধানে কোন অনুসন্ধান হয়ে থাকে, এটি হবে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী এবং কার্যকরী এবং এর থেকেও কিছু ভালো ফলাফল আশা করতে পারি আমরা।
The great filter : অনুমান করা হয়, যদি Breakthrough Listen প্রোজেক্ট চালানোর ১০ বছর পার হয়ে যায় এবং কিছু না পাওয়া যায়, তবেও আমাদের হাতে এলিয়েনদের খুঁজে পাবার আরেকটি সুযোগ থাকতে পারে। Fermi Paradox এর আরেকটি সমাধান, যা হতে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন, আমাদের এই মহাবিশ্বের কোথাও Great Filter নামক জিনিষের অস্তিত্ব রয়েছে, যা মানুষের বুদ্ধিমত্তার শেষপ্রান্ত নির্দেশ করে। যার মাধ্যমে আমরা অন্য কোন সভ্যজগতে কিংবা কোন এক জগতের ধ্বংসের ( destruction ) এর দ্বারপ্রান্তে চলে যাবো। যদি আমরা সেটা অতিক্রম করতে পারি তবে আমরা হতে পারি প্রথম/শেষ বুদ্ধিমান সভ্যতা যারা সেই জায়গা অতিক্রম করেছে। সেখানে আমরা হয়তবা কোন প্রাণের সন্ধান পাবো কিংবা দেখতে পাবো আমাদের আগে অন্য যে প্রাণের অস্তিত্ব / সভ্যতা ছিলো, তারা সবাই ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু এমন কিছু আমরা এখনো খুঁজে পাইনি, এমনকি সুদূর ভবিষ্যতে খুজেও পাবো কিনা, সে ব্যাপারে নিশ্চিত নই। কারণ এটা নিছক একটি অনুমিত ধারণা মাত্র।
এই মহাবিশ্বে আমরা একাঃ Fermi Paradox এর আরেকটি ভয়াবহ এবং শেষ তত্ত্বটি হলো, সম্ভবত এই মহাবিশ্বে আমরা একা, শুধুমাত্র আমরা বাদে আর কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব নেই। ধরা যাক, এই পৃথিবীতে কীভাবে বহুকোষী প্রাণের সঞ্চার ঘটলো তা আমরা জানিনা। এমনকি একটি একক কোষ থেকে কীভাবে এবং কোথায় বহুকোষী প্রাণী এবং অনান্য যৌগিক প্রাণ সঞ্চার ঘটলো, কীভাবে এবং কোথা থেকে পানি আসলো তাও আমরা জানিনা। তাহলে সৃষ্টির শুরু থেকে চলে আসা মানুষের বিবর্তনের ফলাফল কোথায় গিয়ে ঠেকবে, সে বিষয়ের কি হবে? আমাদের পৃথিবী সূর্য থেকে একদম ঠিক দুরত্বে অবস্থান করছে, যেখানে প্রাণ সঞ্চার করা সম্ভব এবং জীবের বসবাসযোগ্য তাপমাত্রা রয়েছে । এমনকি পৃথিবীতে মানুষের প্রথম পা রাখার আগে মহাকাশ থেকে উড়ে আসা বিশাল গ্রহাণুর আঘাতে সেখানে অবস্থান করা ডাইনোসর এবং অন্যান্য বিশাল জীবের বিলুপ্তি এবং জীবনযাপনের জন্য একটি বাসযোগ্য অবস্থা আসার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। এমনকি , মানব সভ্যতার বর্তমান বয়স মাত্র কয়েক হাজার বছর। যা ১৩.৮ বিলিওন বছর বয়সী এই মহাবিশ্বের তুলনায় তুচ্ছ। ফলে, এমনটিও ধারণা করা হয়ে থাকে যে , পৃথিবী এই মহাবিশ্বের এক সামান্য ও কেবলমাত্র সাফল্য যার ফলে জীবনের সঞ্চারণও বিবর্তন ঘটেছে।
অধিকাংশ বিশেষজ্ঞরা সম্ভাবনায় বিশ্বাস করেন না। বরং তারা ভেবে থাকেন যে, আগামী কয়েক হাজার বছরের মাঝে আমাদের সৌরজগতে মাইক্রোবায়োলজিকাল লাইফের সন্ধান পাওয়া যাবে। কিন্তু আমরা এখনো এটি খুঁজে পাইনি এবং আদৌ খুঁজে পাবো কিনা, এই সন্দেহকে কোনভাবে অস্বীকার করা যাবেনা। যতক্ষন না আমরা বহির্বিশ্বে প্রাণের স্বপক্ষে কোন প্রমাণ খুঁজে না পাই, ততক্ষন আমরা অনুমাননির্ভরই থেকে যাবো। কারণ এই মহাবিশ্বে সংবেদনশীল এবং একমাত্র জীবনধারী সভ্যতার উদাহরণ একমাত্র আমরাই। যাকে আমরা হিউম্যানিটি ( মানবতা ) বলে জানি, যার ফলে পৃথিবীর একটি আলাদা পরিচয় আছে। ফলে আমাদের উচিত , এই জীবনধারা কে যতোদিন সম্ভব টিকিয়ে রাখা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করা।
সবশেষে, প্রয়াত Sir Arthur C. Clarke বলেন, দুইটি সম্ভাবনা আছে; হয় আমরা একা, নয়তো আমরা নই। দুইটিই সম্ভাবনাই সমানভাবে আতঙ্কজনক।
আমরা এখনো এলিয়েনদের দেখা পাইনি কেনো?
Reviewed by Brandon
on
08:57
Rating:
No comments: