৯ এর বিষ্ময়কর জগতে কিছুক্ষণ
আমি প্রতিদিনই কিছু না কিছু নিয়ে ঘাটাঘাটি করে থাকি। আজকের লেখার বিষয়বস্তু একটু উদ্ভট, কিন্তু বরাবরের মতো এবারও পড়ে বোঝার মতো অনেক কিছুই পাওয়া যাবে বলে আমি মনে করি।
সবাই তো ঘড়ি দেখেছি। না আজকালকার হাল ফ্যাশনের ডিজিটাল ঘড়ির কথা বলছি না। আমি বলছি অ্যানালগ ঘড়ির কথা, ঐতিহ্যবাহী দেয়ালঘড়ির কথা। তাকালেই দেখা যায়, যেকোনো ঘড়িই দেখতে একরকম [পেছনের বাহারি রঙ ব্যাতিত]। ঘড়িকে ১২ ভাগে ভাগ করা হয়েছে এবং এর মধ্যে ৪টি প্রধান ভাগ রয়েছে। সে ভাগগুলো হচ্ছে ৩, ৬, ৯, ১২। প্রশ্ন দাঁড়াচ্ছে কেন ১২ ভাগে ভাগ করা হলো। যদি করাই হলো তবে প্রধান চার ভাগে কেন ৩, ৬, ৯, ১২ পড়বে?
আসছি পরের প্রসঙ্গে। বৃত্তের অন্তর্গত কোণ কেন ৩৬০০? সবাই জানি এটা ৩৬০০, কিন্তু কেন, কেউ কি জানি? দেখি আমার ফলাফলগুলো দিয়ে মেলানো যায় কিনা। কিছু স্বর্গীয় নিয়মকানুন এর মধ্যে অন্তর্নিহিত রয়েছে। আপাতত তো তাই লিখতে হবে, কারণ আমি জিনিসগুলো ঠিক মতো ধরতে পারছি না। তাই একজন স্বভাবসুলভ রাজনীতিবিদের মতোই আচরণ করব।
একটা বৃত্ত নিলাম। সেটাকে দ্বিখণ্ডিত করলাম। কত কোণ পাই? ১৮০০। আপাতত ধরে নিয়েই কাজ করব যে বৃত্তের অন্তর্গত কোণের পরিমাণ ৩৬০০। দেখি কী পাই।
১৮০ = ১ + ৮ + ০ = ৯
এবার ১৮০ কেও ২ ভাগ করব। কত পেলাম? ৯০ না প্রতি ঘরে? এই ঘরগুলোকেই তো আমরা Quadrant বলি।
৯০ = ৯ + ০ = ৯
মজাই লাগছে, আরও ভাগ করতে থাকি…
৪৫ = ৪+৫ = ৯
২২.৫ = ২ + ২ + ৫ = ৯
১১.২৫ = ১ + ১ + ২ + ৫ = ৯
৫.৬২৫ = ৫ + ৬ + ২ + ৫ = ১৮ = ১ + ৮ = ৯
২২.৫ = ২ + ২ + ৫ = ৯
১১.২৫ = ১ + ১ + ২ + ৫ = ৯
৫.৬২৫ = ৫ + ৬ + ২ + ৫ = ১৮ = ১ + ৮ = ৯
কিছু কি দেখতে পাচ্ছেন? এই প্রক্রিয়ায় যদি আমরা কোনো একটি এক অঙ্কের সংখ্যায় যেয়ে থামতে চাই তবে সেই সংখ্যাটা ৯ ই হবে। এছাড়া আর কোনো সংখ্যা আমরা পাব না। নাম্বার থিওরিতে কি এমন কোনো স্বর্গীয় মতবাদ প্রচলিত আছে? Vertex Mathematics অনুযায়ী বলা যায়, হ্যাঁ আছে। যারা প্যাটার্ন রিকগনিশন ভালো বোঝেন, যারা ফ্র্যাক্টাল ভালো বোঝেন, আমি নিশ্চিত তারা এখানেও একটা প্যাটার্ন দেখতে পাবেন। https://www.youtube.com/watch?v = U_PDIZu8Gcs
এটাকে বলা হয় Internal Convergence। কী পাচ্ছি তাতো দেখতেই পাচ্ছেন, বৃত্ত। এটা দিয়েই শুরু করেছিলাম, তাই না? আসুন দেখি কী বোঝা গেল, জ্যামিতির সার্বজনীন নিয়মে দেখা যায় একটা বৃত্তকে অসংখ্যবার সমভাগে ভাগ করতে থাকলে যে কোণের সৃষ্টি হয় তা ৯ এ নেমে যায়। উপরে যেভাবে দেখালাম সেভাবে যোগ করলেই হবে। আরো একটু ভড়কে দেই। উপরের সবগুলো সংখ্যা ৯ দ্বারা বিভাজ্য। যারা সংখ্যাতত্ত্ব সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখেন তারা জানেন যে কোনো সংখ্যার একক ও দশকের ঘরের অংকগুলো যোগ করলে যদি সংখ্যাটি ৩ দিয়ে ভাগ হয়, তাহলে পুরো সংখ্যাটি ৩ দ্বারা বিভাজ্য। তাহলে ৯ এর জন্য কী হয়? মোটামুটি একই নিয়ম। একক ও দশকের ঘরের অংকগুলোর সমষ্টি যদি ৯ দ্বারা বিভাজ্য হয় তবে পুরো সংখ্যাটা ৯ দ্বারা বিভাজ্য। [Divisibility criteria of 3 and 9]
ঘড়ির কথা বলছিলাম না? তার আগে আসি সিকুয়েন্স এ। ১ থেকে ৮ পর্যন্ত যোগ করলে কত পাই? n(n + 1)/2 = ৮ × ৯/২ = ৩৬। তার সাথে ৯ যোগ করি তো। তাহলে পাই ৩৬ + ৯ = ৪৫। ৪৫ কে আগের মতো ভেঙ্গে লিখলেই পাব ৪ + ৫ = ৯। এখানেও একটা ভড়কে দেয়ার মতো ধাঁধা আছে। ৯ এর সাথে যেকোনো সংখ্যা যোগ করি। দেখা যাক কী পাই…
৯ + ৫ = ১৪ = ১ + ৪ = ৫
এটাই কি যোগ করেছিলাম না? আরও দেখি তো কী কী পাই…
৯ + ১০ = ১৯ = ১ + ৯ = ১০ = ১ + ০ = ১
৯ + ৪৫ = ৫৪ = ৫ + ৪ = ৯
৯ + ২৪ = ৩৩ = ৩ + ৩ = ৬
৯ + ৩ = ১২ = ১ + ২ = ৩
৯ + ৪৫ = ৫৪ = ৫ + ৪ = ৯
৯ + ২৪ = ৩৩ = ৩ + ৩ = ৬
৯ + ৩ = ১২ = ১ + ২ = ৩
দেখা যাচ্ছে এটা ১০ এর উপরে হয়ত ভালো কাজ করে না। কী বুঝলাম? সব জায়গায় বোঝার জন্য না, অনেক সময় মজার জন্যেও পড়তে হয়। ধাঁধা লেগে গেলো না ভালো মতো? আমার নিজেরই মাথা ঘুরছে বনবন করে। এজন্যেই মনে হয় বিজ্ঞানী টেসলা বলেছিলেন, “কেউ যদি ৩, ৬, ৯ এর ধাঁধাটা ধরে ফেলত তবে সে বিশ্ব নিজের মুঠোয় করে ফেলতে পারত”। বাংলায় তো নয় ছয় নামক একটা বাগধারাও আছে। তবে সেটা এখানে জরুরি কিছু না মনে হয়। দেখা যাচ্ছে ৯ দিয়ে সবকিছু বানানো যায় আবার কোনো কিছুই বানানো যায় না।
এবার একটু অন্য দিকটা দেখব। এতো কিছু নিয়ে বললাম, আমার অতিপ্রিয় জ্যামিতি বাদ রাখি কীভাবে। একটা ত্রিভুজ দিয়ে শুরু করে একটা বহুভুজ আঁকি। দেখি কেমন হয়। তার আগে একটু অঙ্ক করে নিতে হবে। নাহলে জিনিসটা পরিষ্কার হবে না।
3 sided polygon = (2n – 4) × 90 = 180 = 1 + 8 + 0 = 9
4 sided polygon = (2 × 4 – 4) × 90 = 360 = 3 + 6 + 0 = 9
5 sided polygon = (2 × 5 – 4) × 90 = 540 = 5 + 4 + 0 = 9
6 sided polygon = (2 × 6 – 4) × 90 = 720 = 7 + 2 + 0 = 9
4 sided polygon = (2 × 4 – 4) × 90 = 360 = 3 + 6 + 0 = 9
5 sided polygon = (2 × 5 – 4) × 90 = 540 = 5 + 4 + 0 = 9
6 sided polygon = (2 × 6 – 4) × 90 = 720 = 7 + 2 + 0 = 9
আবারও বলব, ৯ দিয়ে সবকিছু বানানো যায় আবার কিছুই বানানো যায় না। 9 models everything and ‘no’thing. ৯ বাদে ১ থেকে ৮ পর্যন্ত যোগ করলে পাই ৩৬। এটা দিয়ে অনেককিছু করা যায় আবার কিছু করা যায় না (০)। তাহলে পেলাম ৩৬ + ০ = ৩৬০। পাগলের প্রলাপ হলেও তো সত্যি জিনিস। https://www.youtube.com/watch?v = 4sSLKxMmbwI
কী দেখছেন? এটাকে বলা হয় External Convergence.
অনেক তো লিখলাম। মনে হয় সবারই একটু মাথা ধরে গেছে। আসুন একটু খেলি। আপনার কোনো বন্ধুকে বলুন ৩ বা ৪ অঙ্কের একটা সংখ্যা নিতে। এটা যেকোনো বড় সংখ্যার জন্যেই প্রযোজ্য। কিন্তু ধরে নিলাম আমরা আমাদের বন্ধুদের পাগলা গারদে পাঠানোর পক্ষপাতী নই। যাই হোক, সে একটা সংখ্যা নেবে। সেই সংখ্যার অংকগুলোর যোগফল বের করবে। আসল সংখ্যা থেকে সেই যোগফলটা বিয়োগ করবে। তাকে বলবেন সেই নতুন সংখ্যার মধ্য থেকে ৯ বাদে যেকোনো একটা সংখ্যায় গোল দাগ দিতে। আপনাকে বলতে হবে গোল করা সংখ্যাটি কত। কীভাবে করবেন? যদি আসল মজাটা জানেন তবে করতে লাগবে এক মিনিট।
ধরে নিলাম সংখ্যাটি ১৭২৯। যারা জানেন না তাদের বলে দেই, এটা হচ্ছে সেই ক্ষুদ্রতম সংখ্যা যাকে দু’ভাবে দু’টি সংখ্যার কিউবের সমষ্টি হিসাবে লেখা যায়।


এই যোগফলটা বিয়োগ করতে হবে। তাহলে পাই ১৭২৯ – ১৯ = ১৭১০
তাকে বলে দিয়েছেন ৯ গোল করা যাবে না। এই সংখ্যায় সেটা নেই। ধরে নিলাম সে ৭ গোল করেছে। সে আপনাকে তাহলে বাকি সংখ্যাগুলো বলবে। সেগুলো যোগ করুন।
১ + ১ + ০ = ২
নয় থেকে এই সংখ্যাটা বাদ দিন, ৯ – ২ = ৭। এটাই উত্তর।
১ + ১ + ০ = ২
নয় থেকে এই সংখ্যাটা বাদ দিন, ৯ – ২ = ৭। এটাই উত্তর।
যারা মনে করছেন আমি পাগল হয়েছি তাদের জন্য না হয় আরেকটা দেখি…
৭৮৩২
যোগফল = ৭ + ৮ + ৩ + ২ = ২০
নতুন সংখ্যা = ৭৮৩২ – ২০ = ৭৮১২
যোগফল = ৭ + ৮ + ৩ + ২ = ২০
নতুন সংখ্যা = ৭৮৩২ – ২০ = ৭৮১২
মনে করলাম সে এবারে ২ গোল করেছে। তাহলে আপনাকে বলবে ৭,৮,১। দেরি না করে যোগ করে ফেলুন তো…
৭ + ৮ + ১ = ১৬
৯ চেয়ে বেশি পেয়ছেন না? আবার যোগ করুন। এক অঙ্কের সংখ্যা না আসা পর্যন্ত থামবেন না।
১ + ৬ = ৭
এটাকে ৯ থেকে বাদ দিন তো…
৯ – ৭ = ২
এটাই কি উত্তর নয়?
৭ + ৮ + ১ = ১৬
৯ চেয়ে বেশি পেয়ছেন না? আবার যোগ করুন। এক অঙ্কের সংখ্যা না আসা পর্যন্ত থামবেন না।
১ + ৬ = ৭
এটাকে ৯ থেকে বাদ দিন তো…
৯ – ৭ = ২
এটাই কি উত্তর নয়?
মজার খেলা। যাওয়ার আগে বলে দিচ্ছি এটা কেন কাজ করে। যেকোনো সংখ্যা নিন। তার অংকগুলো যোগ করুন, আসল সংখ্যা থেকে বিয়োগ দিন। যে নতুন সংখ্যাটা পাবেন সেটার সবগুলো অংকের সমষ্টি ৯ হবে। জিজ্ঞেস করবেন না কেন। আমি যে উদাহারণটা দিয়েছি, সেটা দিয়েই দেখি না কেন। সংখ্যাটা ছিলো ৭৮৩২, যোগফল বিয়োগ করার পরে পেয়েছিলাম ৭৮১২। ৭ + ৮ + ১ + ২ = ১৮ = ১ + ৮ = ৯।
দুনিয়াটা আসলেই চমৎকার। মজা লাগলে কৃতজ্ঞ হব। ধন্যবাদ সবাইকে। ভালো থাকবেন।
৯ এর বিষ্ময়কর জগতে কিছুক্ষণ
Reviewed by Brandon
on
09:18
Rating:
No comments: